আজ রবিবার

২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৮ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি

এখন সময়:

রাত ১:২৭

কোন হইচই নেই তবুও মতলবে আছে ‘তাফালিং বাজার’

311 Views

তেমন কোনো হইচই নেই। দোকানি ও ক্রেতারা যার যার মতো বেচাকেনায় ব্যস্ত। চায়ের দোকানে কিছু লোকের আড্ডা। সেখানে নানা কথা, নানা আলোচনা। মোটামুটি শান্ত-সৌম্য পরিবেশ। কোনো উত্তাপ-বিশৃঙ্খলা নেই। তারপরও জায়গাটির নাম ‘তাফালিং বাজার’।

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর গ্রামে এ বাজারের অবস্থান। এর পশ্চিম দিকে উপজেলার শান্তিনগর বাজার, পূর্ব দিকে ডিঙ্গাভাঙ্গা গ্রাম, দক্ষিণে উত্তর উদ্দমদী ও উত্তরে উপাদী গ্রাম। উপজেলার ভাঙ্গারপাড়, পৈলপাড়া, বাবুরপাড়াসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ বাজারটিতে নিত্যপণ্য কিনে থাকেন।

ভূমি কার্যালয়ের নথিতে এটি উপাদী উত্তর গ্রাম হিসেবে নথিভুক্ত থাকলেও স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি ‘তাফালিং বাজার’ হিসেবেই পরিচিত। প্রায় ৩০ বছর ধরে মাঝারি আকারের বাজারটি এই নামেই পরিচিত।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে উপাদী উত্তর গ্রাম। গ্রামের কিছুটা মাঝখানে সড়কের দুই পাশে বাজারটির অবস্থান। মুদি, কনফেকশনারি, ফার্মেসি, হার্ডওয়্যার, চা, সেলুনসহ মোট ৩০টি দোকান আছে সেখানে। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে সেখানে শাকসবজির হাটও বসে। ওই বাজারে গিয়ে স্থানীয় ১৫ থেকে ১৬ জনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

দোকানে বসে কথা হয় ওই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন বকাউল (৭০), দলিল লেখক মো. কাইয়ুম মিয়া, স্কুলশিক্ষক মো. রিপন, অটোরিকশাচালক মো. মোস্তাফা ও সেলুনকর্মী (নরসুন্দর) অপু চন্দ্র সূত্রধরসহ কয়েকজনের সঙ্গে। বাজারটির এমন নাম কেন জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, বাজারটি তাঁদের গ্রামের আবু হানিফ বকাউলের জায়গায় স্থাপিত। ১৯৯৫ সালে এটি স্থাপন করা হয়।

মো. সোলাইমান নামের এক ব্যক্তি সেখানে প্রথম দোকানঘর দেন। সে সময় সেখানে বসত মাছের বাজার। নানা রকমের তাজা মাছের পসরা বসত। মাছ কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে ওঠে একটি চক্র। অধিকাংশই ছিলেন শ্রমিকশ্রেণির। তাঁরা সেখানে দাপট দেখাতেন। স্থানীয় লোকেরা ওই দাপটকে বলতেন ‘তাফালিং’। সেই থেকে এর নাম হয় ‘তাফালিং বাজার’।

দলিল লেখক মো. কাইয়ুম মিয়া ও স্কুলশিক্ষক মো. রিপন বলেন, তাঁরা অভিধানে খোঁজ করে তাফালিং শব্দটির অর্থ পেয়েছেন। সেখানে এর কোনো খারাপ বা নেতিবাচক অর্থ পাননি। অভিধানে তাফালিং শব্দটির অর্থ ঝোড়ো বাতাস বা উত্তাপ। তবু বাজারটির এই নাম নিয়ে তাঁরা লজ্জাবোধ করেন। নামটির পরিবর্তন চান। কারণ, অনেকে মনে করেন, বাজারটিতে মারামারি, মাস্তানি, রংবাজি, চাঁদাবাজি, ধান্দা ও ফাঁপরবাজি চলে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টা। খুবই শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ বাজারটির।

৫ নম্বর উপাদী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহিদ উল্লাহ প্রধানের ভাষ্য, তাঁর ইউনিয়নের বাজারটি এক নামে সবাই চেনেন, জানেন। নাম শুনে দূরের লোকেরা মুচকি হাসেন। কিছুটা অবাক হন, ভয়ও পান। এটি এর বিশেষত্ব। তবে বাজারের এমন নাম নিয়ে তিনি কিছুটা বিব্রত ও লজ্জিত। ৩০ বছর আগে কিছু লোকের তাফালিংয়ের কারণেই এমন নামকরণ। এখন এখানে কেউ তাফালিং ও রংবাজি করেন না।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমজাদ হোসেন বলেন, বাজারটির কথা তিনি শুনেছেন। কখনো সেখানে যাননি, গিয়ে দেখবেন।

Share This Article
Leave a Comment

শেয়ার করুন:

শীর্ষ সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ