loader image

আজ শুক্রবার

১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

এখন সময়:

রাত ১১:৪১

মতলব উত্তরের কুইচ্চা যাচ্ছে চীন, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে

মাহফুজুর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খাল-বিল, ডোবা, ধানী জমিসহ বিভিন্ন স্থানে এক ধরনের চাঁই ব্যবহার করে ধরা হচ্ছে কুইচ্চা। বিশেষ কায়দায় ধরা এসব কুইচ্চা যাচ্ছে চীন, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে। আর কুইচ্চা বিক্রি করে অন্তত ৩০ পরিবার স্বাবলম্বী। প্রতিমাসে প্রায় নয় লাখ টাকা আয় করেন তারা।

কুইচ্চা ধরার পদ্ধতি দেখে ও লাভজনক পেশা হওয়ায় অনেকেই এ পেশায় জড়িয়ে পরছেন। কুইচ্ছা মাছ কেনার জন্য পাইকাররা প্রতি সপ্তাহে একবার করে এসে তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন তারা। ঢাকা থেকে কুইচ্চা বিদেশে রপ্তানি করা হয়, যা উপজেলায় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

কুইচ্ছা দেখতে অনেকটাই সাপের মতো। এর রয়েছে বিভিন্ন নাম- কুঁচে মাছ, কুচিয়া, কুইচ্চা বা কুচে বাইম। এটি একটি ইল-প্রজাতির মাছ। বিশেষ করে কুইচ্চা মাছ মানুষ বিভিন্ন রোগের প্রতিকারের জন্যও খেয়ে থাকেন।

জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই কুইচ্চা মাছ ধরা হলেও বছরের নভেম্বর থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এ মাছ ধরার উপযুক্ত মৌসুম। প্রতিদিন একজন শিকারি গড়ে ৩ কেজি থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত কুইচ্চা মাছ ধরতে পারে।

কুইচ্ছা ব্যবসায়ী গোফরান মিয়া জানান, তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার উজানভাটিয়া এলাকায়। তিনি ছোট ভাই দিদারুলকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে কুইচ্চা ধরে বিক্রি করে আসছেন।

গোফরান, দিদারুলদের মতো রমিজ, সাদ্দাম, দেলোয়ার হোসেনসহ ৩৫ পরিবারের লোকজন এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। গোফরান মিয়া আরো জানান, ৩৫টি পরিবারের মধ্যে প্রতি পরিবারের ১০০ থেকে ১৫০টি চাঁই রয়েছে। কেঁচো গেঁথে এসব চাঁই খাল-বিল, ডোবা, ধানী জমিসহ বিভিন্ন স্থানে পাতা হয়। হাঁটু পর্যন্ত পানিতেও চাঁই পাতা হয়ে থাকে। বর্তমানে তারা মতলব উত্তর উপজেলার তালতলী, ঝিনাইয়া, রুহিতারপার, ছোটমরাধন, ঘনিয়ারপাড়, দেওয়ানজীকান্দি, আধুরভিটি, ওঠারচর, দুলালকান্দি এলাকায় অবস্থান নিয়ে কুইচ্চা ধরছেন। প্রত্যেকে গড়ে প্রতিদিন তিন থেকে চার কেজি কুইচ্চা ধরছেন। আর প্রতিদিন বেপারীরা এসব কুইচ্চা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি কেজি কুইচ্চা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ওই হিসেবে প্রতি পরিবার প্রতিদিন এক হাজার টাকার বেশি আয় করছেন। আর মাসে আয় হচ্ছে ৩০ হাজার। ৩৫ পরিবার মাসে আয় করছে নয় লাখ টাকার মতো।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, সকাল হলে ২-৩ জন করে একটি দলে বিভক্ত হয়ে কুইচ্চা শিকার করতে বের হন তারা। সারাদিনে গড়ে ৫ থেকে ৭ কেজি কুইচ্চা শিকার করতে পারেন। দিন শেষে সংগ্রহকৃত কুইচ্চাগুলো পাইকারদের হাতে তুলে দিয়ে ৬০০-১০০০ টাকা হাতে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এভাবে কুইচ্চা মাছ বিক্রি করে তাদের শতাধিক পারিবারের সংসার চলছে।

কুমিল্লা থেকে আসা পাইকারি কুইচ্চা ব্যবসায়ী বিমল দাস বলেন, আমাদের দেশে কুইচ্চা অনেকেই পছন্দ করে না। এজন্য কেউ এ পেশায় ঝুঁকতে চায় না। তবে, আমাদের দেখে ও লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় অনেকেই এ পেশায় ঝুঁকতে শুরু করেছে। সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলে কুইচ্চা চাষের ওপর প্রকল্প গড়ে তোলা সম্ভব।

তিনি বলেন, আমরা এখান থেকে এগুলো কিনে নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় বড় পাইকারি ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। উত্তরার হাউজ বিল্ডিং ও কোনাবাড়ি এলাকায় কুইচ্চার আড়ৎ রয়েছে। ওই আড়ৎ থেকে সপ্তাহে দুই দিন চীন, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে। ঐসব দেশে কুইচ্চার চাহিদা অনেক বেশি। সেখানে কুইচ্ছা একটি স্বাদের খাবার হিসেবে পরিচিত।

মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, প্রাকৃতিকভাবে জলাশয়, ডোবা বা পুকুরে প্রচুর কুইচ্চা জন্মায়। বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর এসব কুইচ্চা শিকার করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। এতে বেকারত্ব দূর করাও সম্ভব। তবে যেসব কুইচ্চা প্রাকৃতিকভাবে জলাশয়ে জন্ম নেয় এগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়।

Leave a Comment

আজ শুক্রবার , রাত ১১:৪১

১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ সার্চ করুন

Search

© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত মতলব টুডে