চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। থানার হিসাব অনুযায়ী গত ছয় মাসে ১৬টি চুরির মামলা নথিভুক্ত হলেও স্থানীয়দের দাবি, বাস্তবে চুরির সংখ্যা অর্ধশতাধিক। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নতুন চুরির ঘটনা ঘটছে, যা জনমনে গভীর আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ছেংগারচর পৌরসভা এলাকায় ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গবাদিপশুর খামার, এমনকি মসজিদ-মন্দিরও চোরচক্রের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। ছেংগারচর বাজারের স্কুল রোড থেকে একটি পিকআপসহ শতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার চুরি, শ্রী শ্রী বিগ্রহ কালী মন্দিরের দানবাক্স ভাঙা এবং কেশাইরকান্দী মসজিদের মাইক চুরিসহ আলোচিত একাধিক ঘটনার পর এলাকাজুড়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
ব্যবসায়ী লিটন সরকার বলেন, “দোকানে সিসি ক্যামেরা থাকার পরও চোরচক্র নির্বিঘ্নে পিকআপসহ সিলিন্ডার নিয়ে গেছে। থানা থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরত্বে এমন ঘটনা। এটা উদ্বেগজনক।”
আরেক ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, “আমার দোকান থেকে সব মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে চোররা। বাজারের মাঝেই থানার অবস্থান, সেখানে যদি এমন চুরি হয় তাহলে গ্রামের পরিস্থিতি কী হতে পারে? সিসি ক্যামেরায় চোরদের দেখা যাচ্ছে, তবুও কাউকে আটক করা হয়নি।”
এলাকার আরও ব্যবসায়ী জানান, চুরির ভয়ে দোকানে অতিরিক্ত পাহারা বসাতে হচ্ছে, যা তাদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। বারবার ক্ষতির মুখে পড়ে অনেক দোকানদার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন“রাতে একটু শব্দ হলেই মনে হয় চোর ঢুকেছে। পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় থাকছি। পুলিশকে জানিয়েও তেমন ব্যবস্থা দেখতে পাই না।”
মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল হক বলেন, “নিবন্ধিত ১৬টি ঘটনার সবগুলোই তদন্তাধীন। চুরি ঠেকাতে নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে। চোরচক্র শনাক্তে বিশেষ অভিযান চলছে।”
তবে স্থানীয়দের দাবি, মামলার সংখ্যা কম নথিভুক্ত করায় প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে না। অনেক ভুক্তভোগীই ঝামেলা বা হতাশার কারণে মামলা করতে আগ্রহী নন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে মতলব উত্তর ‘চোরের অভয়ারণ্য’তে পরিণত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাদের প্রত্যাশা টহল বৃদ্ধি, রাতের সিকিউরিটি জোরদার, সিসি ক্যামেরার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং চোরচক্র দ্রুত গ্রেপ্তার এসব উদ্যোগই পারে এলাকায় স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে।