চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার বহরী উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়ে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই দিনে প্রায় অর্ধশত ছাত্র ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে।
গণহারে শিক্ষার্থীরা অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হওয়ার খবরটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে ভয় ও আতঙ্কে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে অধিকাংশ ।সে কারনে দুদিনের ব্যবধানে উপস্থিতি কমেছে প্রায় অর্ধেক।তবে গতকাল সোমবার কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়নি।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিতে বিদ্যালয়ে যান মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম রায়হান।গত ২৪ ও ২৫ মে (দুইদিনে) বহরী উচ্চ বিদ্যালয়ে অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪৭ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম,নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাস চলাকালীন সময়ে মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা এবং খিচুনি হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ ঘটনায় আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে। সাথে সাথে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং শিক্ষার্থীদেরকে তাদের বাড়ীতে পৌছে দেয়া হয়।
প্রধান শিক্ষক মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন,সোমবার (২৬ মে) কোন ছাত্র ছাত্রী অসুস্থ হয়নি। তবে আতঙ্কে অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসেনি।
আরও পড়ুন
গত ২৪ ও ২৫ মে (দুইদিনে) ৪৭ জন শিক্ষার্থী অজানা রোগে অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বহরী উচ্চ বিদ্যালয়ে।
এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, ক্লাস চলাকালীন সময়ে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মাথা ব্যথা করে বলতে বলতে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে এবং খিচুনি দেখা দেয়। তাকে সেবা দিতে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির আরো ৫/৭ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে যায়। এ ঘটনায় আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী বলেন, গনিত স্যার আমাদের ক্লাস নিচ্ছেন। হঠাৎ করে আমি মাথা ঘুরে পরে যায়। এমনভাবে মাথা ব্যাথা উঠছে মনে হয়েছে চুলগুলো উঠিয়ে ফেলি। আমার এমন অবস্থা দেখে স্যাররা আমাকে লাইব্রেরিতে নিয়ে যায়। পরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহি,নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবনীসহ ৩/৪ জন শিক্ষার্থী বলেন, আমার সঙ্গে একটা ছাত্র হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। তাকে ধরতে গিয়ে একে একে আমরা ৭/৮ জনের মত অসুস্থ্য হয়ে পড়েছি।
অষ্টম শ্রেণির এক অভিভাবক মাইন উদ্দিন রুবেল বলেন,আমার ছেলেও ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে শিক্ষকরা তাকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেন।তবে সে ভয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ, অন্য কোন সমস্যা ছিলনা।
ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, আমি ক্লাস নিচ্ছি, এমন সময় মাহি নামে এক ছাত্রী অসুস্থ্য হলে তাকে অন্যদের ধরতে বলি। সে বলে আমার ও মাথা ঘুরেছে এবং চোখ দিয়ে হঠাৎ পানি পরা শুরু করেছে।
বহরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, গত শনি ও রবিবার ক্লাশ চলাকালীন সময়ে অষ্টম,ননম ও দশম শ্রেণির ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রথমত তাদের মাথা ব্যথা করে এবং পরবর্তীতে খিচুনি হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তাদের দেখে ভয় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিদ্যালয়ে। আমরা বিষয়টি স্বাভাবিক মনে করে শিক্ষার্থীদের বাবা মাকে খবর দেই, পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিষয়টি অবগত করি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারী পাঠানো হয়। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সেবা দিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে কাউকেই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়নি।প্রধান শিক্ষক আরো জানান, স্কুল থেকে বাসায় গিয়ে সুস্থ হয়ে গেছে এবং বিদয়ালয়ে আসছে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাজীব কিশোর বনিক জানান মনস্তাত্ত্বিকরা বলছেন, আতঙ্কিত হয়ে শিক্ষার্থীরা ‘মাস সাইকোলজিকেল ইলনেস’ বা ‘গণ-মনস্তাত্ত্বিক রোগে’ আক্রান্ত হয়েছে। একজনের দেখাদেখি আরেকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এ ধরনের অসুস্থতার ঘটনা ঘটে। এটি এক ধরণের লঘু মানসিক রোগ। তবে ভয় বা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ গোলাম রায়হান বলেন, শরীর দুর্বলতার কারনে মাথা ব্যথা ও পেট ব্যথা হয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। ধারনা করা হয়,অধিকাংশ ছেলে- মেয়ে সকালে না খেয়ে স্কুলে আসে। তাই পেট খালি থাকায় তারা শারিরীকভাবে দুর্বল হয়ে যায়। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।আমরা খাবার স্যালাইন,প্যারাসিটেবলসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ বিদ্যালয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি আমরা সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছি।