আজ রবিবার

১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৯শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

এখন সময়:

দুপুর ১:৩১

ঈদের ছুটি শেষে মতলবে লঞ্চযাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়

54 Views

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে নাড়ির টানে ঈদ করতে গ্রামে আসা মানুষগুলো সুখস্মৃতি নিয়ে আবারও কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে চাঁদপুরের মতলবের কর্মজীবী মানুষগুলো। চাঁদপুর থেকে ঢাকামুখী লঞ্চে ভিড় বাড়ছে— তবে নেই কোনো ভোগান্তি—। ঈদুল আযহার উপলক্ষে দীর্ঘ টানা ১০ দিনের ছুটি শেষে কর্মস্থলে কোন ভোগান্তি ছাড়াই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন দেশের সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী এবং স্কুল,কলেজ, ভার্সিটিগামীসহ বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১৫ জুন) থেকে সরকারি অফিসগুলো পুনরায় চালু হবে। ফলে জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যস্তনগরীতে ফিরতে শুরু করেছেন চাঁদপুরের মতলবের ঈদ উদযাপন করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষগুলো । ঘাটে ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন যাত্রীরা। পন্টুনে শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ তীব্র গরমে নৌযানে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

এর আগে গত ৪ জুন (বুধবার) ছিল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস।

শনিবার (১৪ জুন) সকাল থেকেই চাঁদপুরর মতলবের লঞ্চঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। প্রতি ঘণ্টায় চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা-নারায়নগঞ্জের উদ্দেশে মতলবের ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ছে, যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে ফিরছেন।

শনিবার চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল লঞ্চঘাট, মোহনপুর লঞ্চঘাট,এখলাছপুর লঞ্চঘাট ও আমিরাবাদ লঞ্চঘাটসহসহ বিভিন্ন লঞ্চঘাটে সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদুল আযহার উদযাপন শেষে এখন প্রতিটি লঞ্চঘাটে কর্মস্থলে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। তীব্র গরম উপেক্ষা করে নদীপথে ঘরমুখী হাজার হাজার মানুষ কর্মস্থলে ফিরছে। মতলবের সবচেয়ে পুরনো ষাটনল লঞ্চঘাট (লঞ্চটার্মিনাল)। এ ঘাট থেকে লঞ্চযোগে চাঁদপুরের মতলব উত্তর থেকে নিজ কর্মস্থল রাজধানী ঢাকা,নারায়নগঞ্জে ফিরতে শুরু করেছে হাজারো মানুষ। আধাঘণ্টা-৫০ মিনিট পর পর যাত্রী নিয়ে ঘাট থেকে ছাড়ছে লঞ্চগুলো। লঞ্চে ঝুঁকি এড়াতে যাত্রীদেও ভীড় বেশী হওয়ায় কিছু যাত্র রেখেই ছেড়ে দিচ্ছে।
কারও সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী-সন্তান। সবার মুখেই ঈদের আনন্দ। কেউ কেউ বলছেন, এবারের ঈদযাত্রা ছিল নির্বিঘ্নে ও স্বস্তিদায়ক।

সকাল সাড়ে ১০টায় মতলব উত্তরের ষাটনল লঞ্চঘাটে ঘুরে দেখা গেছে-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীপথে লঞ্চে সিডিউলের লঞ্চগুলোও চাঁদপুর এবং মতলব থেকে নারায়ণগঞ্জের এবং ঢাকার সদর ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। এসময় যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। লঞ্চগুলোতে কিছুটা যাত্রী চাপ দেখা গেলেও যাত্রা ছিল তুলনামূলকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যময়, আর ঈদযাত্রা কষ্টকর না হওয়ায় ঘরমুখো মানুষরা নির্বিগ্নে কর্মস্থলে ফিরে যেতে পেরেছেন। তবে লঞ্চঘাটে পৌছতে বিভিন্ন যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চাঁদপুর থেকে নারায়নগঞ্জের উদ্দ্যেশে ছেড়ে আসা এমভি রাসেল এক্সপ্রেস সকাল ৭টায় ষাটনল ঘাটে আসে । এই লঞ্চে নারায়নগঞ্জের উদ্দ্যেশে যাত্রী উঠে প্রায় তিন শতাধিক যাত্রী। এ লঞ্চের কেরানী মোঃ রুবেল জানান,আমরা যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দে ও নির্বিঘ্নে গন্তব্যস্থলে পৌছাতে আন্ত—রিক রয়েছি। কোনো অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছিনা। সেই সাথে কোনো অতিরিক্ত ভাড়াও নেওয়া হচ্ছেনা।

যাত্রী লালন বলেন, “স্ত্রী-সসন্তানকে নিয়ে ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ি মতলবে এসেছি। কোনো ভোগান্তি— ছাড়াই ঈদ উদযাপন করতে পেরেছি। এখন ফিরছি। আগামীকাল রোববার অফিস খুলা, তাই আজ লঞ্চে চাপ অনেক, তবে নদী পথে লঞ্চযোগে যাত্রা আরামদায়ক তাই একটু ভীড় হলৌও লঞ্চযোগে ফিরছি।” যদিও এখন লঞ্চে যাত্রী বেশি থাকাতে কষ্ট হবে, তবে ঈদ আনন্দের কাছে তা কিছুই নয়। কারণ লঞ্চের চাইতে সড়ক পথে ভ্রমণ আরও বেশি কষ্টের। তাছাড়া বাবা-মায়ের সাথে নির্বিঘ্নে ঈদ করতে পেরেছি এতেই শোকরিয়া।

এদিকে যাত্রাবাড়ি ডেমরা কোনাপাড়ায় স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ড.মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের চলতি এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোঃ শাহরিয়ার খান বলেন, এমনিতে পড়ালেখার প্রচন্ড চাপে ছিলাম। খুব হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। এবার ঈদে আমার কলেজ ১৩ দিন বন্ধ দিয়েছিলো। অনেক দিন পড়ে একটা লম্বা ছুটি পেয়েছি। তাইতো লম্বা ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বাবা-মায়ের সাথে ঈদ উদযাপন করতে এসেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালোভাবে ঈদ করতে পেরেছি।

প্রবাস থেকে বাড়িতে এসেছেন উপজেলার ছেংগারচর পৌরএলাকার শাহআলম লস্কর। তিনি জানান, আমি ঈদেও ৩ দিন আগে সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছি বাবা-মা,স্ত্রী,সন্তানদের সাথে ঈদ উদযাপন করতে। আমার সন্তান ঢাকার পড়াশোনা করে তাই ঢাকাতেই থাকা হয়। তাই স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাবা-মায়ের সাথে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি আসছিলাম। সন্তানের স্কুল খোলা তাই লঞ্চযোগে আজ ঢাকায় যাচ্ছি। লঞ্চে নদী পথে যাতায়াত করতে অনেক সুবিধা ও আরাম দায়ক বলে জানান তিনি।

স্বামীর চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকেন আফরোজা
আক্তার । তিনি বলেন, ঈদ আসলেই সন্তানরা বাড়ির অপেক্ষায় থাকে। বাড়িতে ঈদ উদযাপন করলে আমাদের চাইতে শিশুরা বেশি আনন্দ পায়। দুই সন্তানকে নিয়ে মতলবে ঈদে এবার লম্বা ছুটি পড়েছিলো। তাইতো ঈদে গ্রামে আসা হয়েছিলো। আমার শ্বশুর-শাশুরি এবং পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে ঈদ করে আজকে ঢাকায় যাচ্ছি। কাল রোববার স্বামীর অফিস খোলা । তাই আজ লঞ্চযোগে আবারো ঢাকায় ফেরা।

ষাটনল লঞ্চঘাটের ইজারাদার মোঃ দবির হোসেন বলেন,আগামীকাল রোববার খুলছে অফিস। বিগত দিনের তুলনায় আজ শনিবার ষাটনল লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের একটু ভিড় বেশি। লঞ্চে ভিড় এখন তেমন দেখা যায় না। সাধারণত ঈদের আগের দুইদিন এবং ঈদের ছুটির শেষ তিন দিন আর শুক্রবার ও শনিবার মানুষের চাপ থাকা স্বাভাবিক। আমরা যাত্রীদের নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নেতাদের গন্তব্যস্থলে পৌছাতে সার্বিক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে লঞ্চগুলো ঘাটে ভিড়লে যাত্রীদের লঞ্চে উঠতে সু-শৃঙ্খলভাবে উঠতে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, কোরবানির ঈদে টানা ১০ দিনের লম্বা ছুটি ছিল, এ কারণে মানুষ ধাপে ধাপে রাজধানীতে ফিরছে। আগামীকাল খুলছে অফিস তাই গত কয়েক দিনের তুলনায় রাজধানীতে ফেরা মানুষের চাপ আজ অনেকটা বেশি।

বেলতলী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোজাম্মেল হক পিপিএম বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে লঞ্চঘাটগুলোতে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। এখন ঈদ উদযাপন শেষে কর্মস্থল রাজধানীতে ফিরছে মতলবের মানুষগুলো। নদী পথে নিরাপত্তার জন্য নৌ পুলিশ সদস্যরা টহলে রয়েছে। যাত্রীরা যাতে নিরাপদে কর্মস্থলে যেতে পারেন সেজন্য সব ধরনের প্রস্তÍুতি নেওয়া হয়েছে এবং নৌ পুলিশ কাজ করছে। এই বছর যাত্রীরা খুব ভালো ভাবে ঈদ যাত্রা করতে পারছে। এখনো পর্যন্ত কোনো যাত্রীর অভিযোগ কিংবা অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি।

Share This Article
Leave a Comment

শেয়ার করুন:

শীর্ষ সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

error: Content is protected !!