আজ বৃহস্পতিবার

১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৫ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

এখন সময়:

রাত ১২:৪৫

মতলবের রাজপুত্র মহানায়ক ওয়াসিমের সোনালি দিনের সিনেমার যত গল্প

136 Views

‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান’-খ্যাত প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা মেজবাহ উদ্দিন ওরফে ওয়াসিম ১৯৫০ সালে ২৩ মার্চ চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দি ইউনিয়নের ইন্দরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার সাথেই তাদের পরিবার ঢাকায় বসবাস করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৮৮ সালে তাদের দেওয়ান বাড়ি মেঘনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে ওই বাড়ীর কোন অস্তিত্ব নেই। ওই বাড়ির লোকজন বিভিন্ন স্থানে বাড়ি করে চলে গেছেন। ঢাকায় থাকার কারণে ওয়াসিম পরিবারের কোন বাড়ি-ঘর চাঁদপুরে নেই। ওয়াসিমের পিতা মোজাম্মেল হক দেওয়ান একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন।

২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল শনিবার দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রখ্যাত এই অভিনেতা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মেয়ের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

ওয়াসিম বিয়ে করেছিলেন চিত্রনায়িকা রোজীর ছোট বোনকে। তাদের দুটি সন্তান হয়-পুত্র দেওয়ান ফারদিন এবং কন্যা বুশরা আহমেদ। ২০০০ সালে তার স্ত্রীর অকাল মৃত্যু ঘটে। ২০০৬ সালে ওয়াসিমের কন্যা বুশরা আহমেদ ১৫ বছর বয়সে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। পরীক্ষা চলাকালীন নকলের অভিযোগ তার পরিবারকে জানাবার প্রাক্কালে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে বুশরা লাফ দেন। তাঁর পাশেই চিরনিদ্রা গেলেন বুশরার বাবা অভিনেতা ওয়াসিম।

অন্যদিকে পুত্র ফারদিন লন্ডনের কারডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ব্যারিস্টার হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত।

এক সময় বাণিজ্যিক-অ্যাকশনের পাশাপাশি ফোক-ফ্যান্টাসি সিনেমার এক নম্বর আসনটি দখলে ছিল ওয়াসিমের। ১৯৭২ সালে ঢাকাই সিনেমাতে ওয়াসিমের অভিষেক হয় সহকারী পরিচালক হিসেবে ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’র মাধ্যমে। আর নায়ক হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয় মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে।

১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন তিনি। ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা ছিলেন ওয়াসিম। ১৫২টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।

ওয়াসিম ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজের ছাত্রাবস্থায় তিনি বডি বিল্ডার হিসেবে নাম করেছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি বডি বিল্ডিংয়ের জন্য মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান খেতাব অর্জন করেছিলেন।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো- দ্য রেইন, ডাকু মনসুর, জিঘাংসা, কে আসল কে নকল, বাহাদুর, দোস্ত দুশমন, মানসী, দুই রাজকুমার, সওদাগর, নরম গরম, ইমান, রাতের পর দিন, আসামি হাজির, মিস ললিতা, রাজ দুলারী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন, জীবন সাথী, রাজনন্দিনী, রাজমহল, বিনি সুতার মালা, বানজারান।

তিনি অলিভিয়া, অঞ্জু ঘোষ ও শাবানার সঙ্গে বেশি সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ‘দি রেইন’ সিনেমায় নায়িকা ছিলেন অলিভিয়া। এরপর ‘বাহাদুর’, ‘লুটেরা’, ‘লাল মেম সাহেব’, ‘বেদ্বীন’ সিনেমায় অলিভিয়ার সঙ্গে অভিনয় করেন। ‘রাজ দুলালী’ ছবিতে শাবানার সঙ্গে অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলে। অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে অভিনয় করেছেন- ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘আবেহায়াত’, ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’, ‘পদ্মাবতী’, ‘রসের বাইদানী’সহ বেশকিছু সিনেমায়।

এক মস্তব্যে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ও ‘মিশন এক্সট্রিম’-খ্যাত নাট্যকার-নির্মাতা পুলিশ কর্মকর্তা সানী সানোয়ার বলেন, ‘ওয়াসিম ভাই ১৯৬৪ সালে বডি বিল্ডিংয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে খেতাব পেয়েছিলেন! যেটা তখন ভাবাই যেতো না। সুঠাম দেহের অধিকারী এই নায়কের প্রতি শৈশবে জন্মেছিল অগাধ ভালোলাগা। তাই শৈশবে (১৯৮৬) বন্ধুদের সাথে জীবনে প্রথম তার সিনেমা দেখতে যাই হলে। সেই সিনেমা দেখার জন্য টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে টিকিট কেটেছিলাম। সেই থেকেই স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখা শুরু আমার। এখনও সেই সিনেমার সঙ্গে আছি। বলা যেতে পারে, ওয়াসিম ভাইয়ের রেশ ধরেই আজ আমার সিনেমা বানানোর হাতেখড়ি। এটুকুই বলতে চাই, নায়ক ওয়াসিম—তুমি আজীবন আমার কাছে মহানায়ক হয়েই রবে।’

Share This Article
Leave a Comment

শেয়ার করুন:

শীর্ষ সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

error: Content is protected !!