আজ রবিবার

১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৮ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

এখন সময়:

সকাল ৬:০৩

আমিরাবাদ ইউনিয়নে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে ভূমি সেবা

38 Views

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বর্তমান চিত্র যেন এক অবহেলিত ইতিহাসের অংশ। ১৯৫৪ সালে আমিরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের টিনশেড ভবন নির্মিত হয়। ৭৫ থেকে ৮০ বছর আগে নির্মিত এই জরাজীর্ণ ভবন এখনো তিনটি ইউনিয়নের (ফরাজীকান্দি, এখলাসপুর ও জহিরাবাদ) মানুষের ভূমি সেবা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বর্তমান অবকাঠামোর অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, এখানে সেবা নিতে আসা মানুষ যেমন ভোগান্তির শিকার, তেমনি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কাজ করতে গিয়ে নানা সংকটে পড়ছেন।

ভবনের ছাদে চিড় ধরেছে, দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়েছে, দরজা-জানালার বেশিরভাগই ভেঙে গেছে। চাইলেই যে কেউ প্রবেশ করতে পারে ভেতরে। ছোট্ট একটি কক্ষে বসেই প্রতিদিন শতাধিক মানুষের ভূমি সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তানজির হোসেন। অফিসে নেই কোনো পর্যাপ্ত আলমারি বা নিরাপদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা। ফলে নথিপত্র চুরির ঝুঁকি সবসময়ই থেকে যায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দেড় বছর আগে অফিসের পেছনের ভাঙা দরজা দিয়ে চোরেরা প্রবেশ করে একটি ল্যাপটপ, মূল্যবান কাগজপত্র এবং আসবাবপত্র নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। এরপরও অফিসটির নিরাপত্তা জোরদারে কোনো স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

ভবনের করুণ অবস্থা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের আবদুল হালিম (৬৫) বলেন, “ভূমি অফিসে গেলেই ভয়ে থাকি—এই বুঝি কোনো কাগজ হারিয়ে গেল। রাতে কেউ ঢুকলেও টের পাওয়ার উপায় নেই। এত পুরনো ভবনে কীভাবে কাজ চলে, তা বুঝি না।”

জাহিরাবাদ ইউনিয়নের সালমা আক্তার (৪০) জানান, “আমি নামজারির জন্য কয়েকবার গিয়েছি। ভিতরে ঢুকলেই গন্ধ, দেয়াল ভাঙা, চেয়ার-টেবিল নড়বড়ে। একজন নারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে খুব অস্বস্তি হয়।”
এখলাসপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ইলিয়াস মিয়া (৩৮) বলেন, “বর্তমান ভূমি কর্মকর্তা আন্তরিক, কিন্তু তার কাজ করার মতো পরিবেশ নাই। নতুন একটা দালান হলে আমাদের সেবা পাওয়াও সহজ হতো।”

আমিরাবাদ এলাকার রাশেদা বেগম (৫৫) বলেন, “এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাগজপত্র রাখা মানেই চুরি বা ক্ষতির আশঙ্কা। সরকার যদি নতুন ভবন করে দেয়, আমরা উপকৃত হবো।”

স্থানীয় সমাজকর্মী মো. ফখরুল সরকার বলেন, “৭০ বছরের বেশি পুরনো এই ভবনটিতে এখনো সরকারি কাজ চলে, এটা ভাবতেই অবাক লাগে। এত মানুষের সেবা এখানে হয়, অথচ অবস্থা একদম করুণ।”

ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. তানজির হোসেন বলেন, “আমি সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করছি এবং সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করছি। তবে পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাজ করতে সংকোচ লাগে। ইতোমধ্যে নতুন ভবনের জন্য সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে।”

এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিল্লোল চাকমা বলেন, “আমরা অফিসটির অবস্থা সম্পর্কে অবগত। নতুন ভবনের জন্য প্রস্তাব ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত পুরাতন ভবন ভেঙে আধুনিক ও নিরাপদ ভবন নির্মাণ করা হবে। ততদিন পর্যন্ত অফিসের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”সরকারি সেবা ব্যবস্থাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ভূমি অফিসের আধুনিকীকরণ সময়ের দাবি।
মতলব উত্তরের আমিরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত জনগণের দুশ্চিন্তা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাবদ্ধতা থেকেই যাবে।

স্থানীয়দের প্রত্যাশা, সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ সেবা কেন্দ্রকে আধুনিক ও জনবান্ধব রূপে গড়ে তুলবে।

Share This Article
Leave a Comment

শেয়ার করুন:

শীর্ষ সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

error: Content is protected !!