চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ৬৪.৪৪% প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। এসব বিদ্যালয়ে চলতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী শিক্ষকরা। এসব বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
জানা যায়, এ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮০টি। প্রধান শিক্ষক নেই ১১৬ বিদ্যালয়ে। ৬৪.৪৪% বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। ১১৬ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে চলতি ৪১ জন ও ভারপ্রাপ্ত ৭৫ জন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব আছেন। ৬/৭ বছর আগে সহকারি শিক্ষক থেকে চলিত দায়িত্ব দেওয়া ৪১ জন প্রধান শিক্ষককে এখনও স্থায়ী করা হয়নি। তাদের স্থায়ী না করায় তাদের স্থলে সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছে না। সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকা, চাকরি থেকে অবসর এবং মৃত্যুজনিত কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকের পদগুলো শূন্য হয়।
এ উপজেলায় ৫টি উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারের পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে তিনটি পদ। মাত্র দুই জন অফিসারের তদারকিতে চালছে এ উপজেলার শিক্ষাকার্যক্রম ত্বরান্বিত করার কাজ।
অভিভাবকরা জানান, শিক্ষার প্রথম ধাপ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখান থেকেই একটি শিশু তার শিক্ষাজীবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে; কিন্তু শিক্ষার ভিত্তিপ্রস্তর এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যদি পাঠদানে ঘাটতি থাকে তবে শিশুদের ভবিষ্যৎ কতটা দৃঢ় হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শূন্যপদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দিয়ে সংকট নিরসনের দাবি জানান তারা।
সচেতন মহল মনে করেন,ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান করাতে পারছেন না। আবার প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা মানে বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা।
জানা গেছে, সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকা, চাকরি থেকে অবসর এবং মৃত্যুজনিত কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকের পদগুলো শূন্য হয়। গত এক যুগেরও অধিক সময় এই অবস্থা চলতে থাকলেও, যা আজও পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির মতলব উত্তর উপজেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান আখম বাহাউদ্দিন জানান, প্রধান শিক্ষক স্বল্পতার কারণে এ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের আটটি পদ সৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও পদ রয়েছে মাত্র পাঁচটি। এর মধ্যে তিনটি পদ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা এক সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রশাসনিক কাজ ও শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠদান করা কঠিন হয়ে যায় । তাই একদিকে গেলে অন্যদিক ব্যাহত হচ্ছে। তবে শূন্যপদগুলো পূরণ হয়ে গেলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জানান, সহকারি শিক্ষকদের থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে ৬৫ ভাগ শিক্ষকের প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু তাদের দাবি শতভাগ। এই সংক্রান্ত মামলা জটিলতার কারণেই প্রধান শিক্ষকের এতটা স্বল্পতা। স্কুলে একজন শিক্ষকের অভাব থাকলে তো স্কুলে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হবেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে ও শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখতে শূন্য পদ পূরণ জরুরি। প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকলে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।