দেখে বুঝার উপায় নেই অথচ মতলব উত্তরের এই খাল দিয়ে কোন একসময় বয়ে যেতো স্বচ্ছ পানির ধারা। যা স্থানীয়দের একরের পর একর জমির কৃষিকাজের পাশাপাশি ব্যবহৃত হতো দৈনন্দিন কাজে।
উপজেলার অন্যতম ব্যস্তময় ছেংগারচর বাজারের মাঝে বয়ে চলা এই খালটিকে ময়লার ভাগাড় হিসেবেই চিনে নতুন প্রজন্ম। ক্ষমতার পালাবদল হলেও দীর্ঘ চার দশকের অযত্ন, অবহেলা আর সংস্কারের অভাবে জলাবদ্ধতার তীব্র ভোগান্তিসহ কৃষি ও মৎস্যক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে খালের আওতাধীন পৌরসভা ও কয়েকটি ইউনিয়নের ১৫ টিরও বেশি গ্রামের হাজার হাজার কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
দীর্ঘসময়ে স্থানীয়দের দখল-ভরাট, দূষণে বন্ধ হয়ে যায় পানিপ্রবাহ, এতে প্রতি বর্ষা আর বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাষণ না হয়ে বাড়িঘর-রাস্তাঘাটে সৃষ্টি হয় চরম জলাবদ্ধতা ও বন্যা।
তবে আশার কথা হচ্ছে, দীর্ঘ ৪ দশক পর হলেও অবশেষে শুরু হয়েছে খালটি সংস্কার। মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতাধীন ৪০ লাখ টাকা ব্যায়ে দুইটি প্যাকেজে
ছেংগারচর থেকে হানিরপাড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ।
শনিবার (১৬ আগস্ট) এই কার্যক্রমের উদ্ধোধন করেন ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি। এসময় এসিল্যান্ড হিল্লোল চাকমা, মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম সাহেদ, মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রবিউল হক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও ছেংগারচর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ উজ্জ্বল ফরাজী, উপজেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. টিপু সুলতান ফরাজি, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পীর আ. মান্নান সাগর, পৌর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবু সাইদ বেপারী, পৌর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান, মহন ফরাজি, কৃষক প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন সহ স্থানীয় সূধীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কার কাজে স্বস্তি এসেছে প্রকল্পের আওতাধীন হানিরপাড়, জোড়খালি, বারআনী, শিকিরচর, ঠাকুরচর, মিলারচর, কলাকান্দা,ছেংগারচর, কেশাইরকান্দি, আদুরভিটি, জীবগাঁও, পাঠানবাজার, ঝিনাইয়া, মরাদন, রুহিতারপাড়, ঘনিয়ারপাড়সহ উচু-নিচু এলাকায়। কৃষিজমিতে সেচের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তারা।
এসময় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ বলেন, এই খালটি ছেংগারচর বাজার কেন্দ্রীক হওয়ায় বাজারের অনেক ময়লা আবর্জনা স্তুপে জমে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়েছিল। এ সেচ খালের সর্বত্রজুড়ে আগাছার রাজত্ব, দখলদারি, এই মৃত খাল হিসেবে পরিণত হয়ে পড়েছিলো। ফলে এ খাল দিয়ে বিলের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতে পারছিলনা। এতে করে পৌরসভা ও কয়েকটি ইউনিয়নে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। প্রতি বছল জলাবদ্ধতায় কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতো। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে অযত্ন আর অবহেলায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প আগাছামুক্ত ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ছিলো না কোন পরিবর্তন। এ খালটি সংস্কারের দাবী ভুক্তভোগী কৃষকরা দাবী জানিয়ে আসছিলো দীর্ঘ দিন। অবশেষে তাদের প্রাণের দাবী এই খালটি সংস্কার হলে বহু কৃষকের অনেক উপকার হবে এবং ফসল উৎপাদনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাবে।