আজ রবিবার

৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

২২শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১১ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

এখন সময়:

রাত ১০:৫১

পরিকল্পিত খুন! ৪৮ ঘণ্টা পর নদীতে মিলল জুয়েলের মরদেহ

463 Views

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাতানী গ্রামের যুবক মো. ফরহাদ জুয়েল (২৭) নিখোঁজ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর তার লাশ মেঘনা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুরো ঘটনাটি ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

একের পর এক তথ্য, পরস্পরবিরোধী বয়ান ও মোবাইল ফোনে মুক্তিপণের দাবিতে জড়িয়ে গেছে একাধিক ব্যক্তি— যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল ও রহস্যময় করে তুলেছে। নিহত জুয়েল কলাকান্দা ইউনিয়নের সাতানী গ্রামের মো. আবুল হাশেমের ছেলে। তার পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও চার বছরের একমাত্র সন্তান আবু সুফিয়ান।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৪ জুলাই শুক্রবার সকাল বেলায় ফরহাদ জুয়েল বাড়ি থেকে বের হয়ে এখলাসপুর বকুলতলা এলাকায় যান বলে খবর পাওয়া যায়। তার মা সুফিয়া বেগম জানান, “আমার ছেলে শাহ আলম মেম্বারের কাছে গিয়েছিল। এরপর আর কোনো খোঁজ মেলেনি।” তবে এখলাসপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহ আলম দাবি করেন, “আমার সাথে জুয়েলের কোনো সাক্ষাৎ হয়নি।”

এদিন রাত ৮টার দিকে হাসিমপুর গ্রামের রুহুল আমিনের সঙ্গে নয়ানগর বটতলায় দেখা হয় জুয়েলের। রুহুল জানান, জুয়েল তাকে কথা বলার কথা বললে তিনি বলেন বাজারে গিয়ে চা খেতে খেতে কথা বলা যাবে। এরপর দুজনেই মোটরসাইকেল নিয়ে বাজারের পথে রওনা দেন। তবে পথিমধ্যে এখলাসপুরের নুরু মিয়া রাজার সঙ্গে দেখা হলে জুয়েল থেমে যান। রুহুল বাজারে পৌঁছালেও জুয়েল আর আসেননি।

নুরু মিয়া রাজা জানান, “জুয়েল বলেছে সে মনির হোসেন গাজীর ছেলে সজিবের কাছে বালুর টাকা নিতে যাচ্ছে।” অন্যদিকে সজিব বলেন, “জুয়েলের সঙ্গে আমার কোনো আর্থিক লেনদেন নেই। এমনকি ওই দিন তার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।”

নিখোঁজের পরদিন ভোরে পাঁচানী স্কুলের পাশের রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখা যায় জুয়েলের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল। এর কিছুক্ষণ পরই জুয়েলের বড় ভাই সোহেলের মোবাইলে অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

সবকিছু ছাপিয়ে ৬ জুলাই দুপুরে চাঁদপুর সদরের নীলকমল এলাকায় মেঘনা নদীতে একটি মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে নীলকমল নৌ পুলিশ ফাঁড়ি মরদেহটি উদ্ধার করে, যা পরে নিখোঁজ ফরহাদ জুয়েলের বলে শনাক্ত হয়।

এই ঘটনায় সাতানী গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে নজরুল, জাহিদুল এবং হযরত আলী প্রধানের ছেলে মনির হোসেনকে মতলব উত্তর থানা পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে।

মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল হক বলেন, “মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দিকটিই আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”

ফরহাদ জুয়েলের পরিবার বলছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে মতলব উত্তরের সর্বত্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, “একজন নিরীহ যুবককে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই নির্মমতা মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনের কাছে আমরা কঠোর বিচার চাই।”

Share This Article
Leave a Comment

শেয়ার করুন:

শীর্ষ সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

error: Content is protected !!