আজ শনিবার

২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১২ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৭ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি

এখন সময়:

রাত ১১:২১

হারিয়ে যাচ্ছে মতলবের ঐতিহ্যবাহী ‘ধানের গোলা’

384 Views

আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার গ্রামীণ ঐতিহ্য ‘ধানের গোলা’।একসময় গৃহস্থের ভিটেবাড়ির অপরিহার্য অংশ ছিল এই গোলাঘর। “গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ”—এই প্রচলিত প্রবাদটি আজও মুখে মুখে ফিরলেও বাস্তবে আর দেখা যায় না সেই বাঁশ-বেত ও কাদা দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী গোলা।

উপজেলার বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত থাকলেও এখন অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতেই নেই ধান, গম বা শস্য মজুত রাখার সে পুরনো গোলাঘর। একসময় সমাজে কার কতটি গোলা আছে—তা দিয়েই নির্ধারিত হতো গেরস্থের সামর্থ্য। এমনকি কন্যা পাত্রস্থ করার ক্ষেত্রেও ‘ধানের গোলা’ ছিল গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড।

গ্রামের বাড়িগুলোতে উঁচু স্থানে বসানো গোলাঘর বানাতেন বিশেষ দক্ষ শ্রমিকরা। বাঁশ ফাটিয়ে কাঠামো তৈরির পর ভেতর-বাইরে মাটির আস্তরণ দিতেন তাঁরা। মাটির গোলায় ৫০০–৬০০ মণ ধান বছরের পর বছর সুসংরক্ষিত থাকত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই কারিগররাও পেশা বদলে অন্য কাজে যুক্ত হয়েছেন।

এখন পাটের বস্তা, টিন ও প্লাস্টিকের ড্রামের সহজলভ্যতা ও কম ঝামেলার কারণে গোলার ব্যবহার প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। ফলে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রাচীন কারুকাজের কদর।

মতলব উত্তর উপজেলার ৭৫ বছর বয়সী একাধিক প্রবীণ জানান, একসময় বাড়িতে গোলা ছাড়া কল্পনাই করা যেত না। ধান সিদ্ধ–শুকানো থেকে শুরু করে চাল বের করা—সব কিছুই হতো গোলার ধান দিয়ে। কৃষকের লোকমান হোসেন জানান, আশির দশক পর্যন্ত গোলা ছিল কৃষকের প্রধান ভরসা। এখন আধুনিকতার ঢেউয়ে তা শুধু স্মৃতিতে রয়ে যাচ্ছে।

পরিশেষে বলা যায়— বাঁশ ও মাটির তৈরি ধানের গোলা ছিল গ্রামীণ বাংলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের প্রতীক। দ্রুতই তা বিলুপ্ত হয়ে আগামী প্রজন্মের কাছে শুধুই ইতিহাস হয়ে যাবে।

Share This Article
Leave a Comment

শেয়ার করুন:

শীর্ষ সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ