
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ। ওয়ার্ডে জায়গা না থাকায় বারান্দাতেও চলছে জরুরি চিকিৎসা। আক্রান্তদের বড় অংশই পাঁচ বছরের নিচের শিশু।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, মায়ের কোলে বসে স্যালাইন নিচ্ছে ছোট ছোট শিশুরা। কারও চোখে পানি, কারও কণ্ঠে কান্না, পানি চাইতে না পেরে কাতরাচ্ছে অনেকে। চিকিৎসক ও নার্সরা এক মুহূর্ত থামার সুযোগ না পেয়েও অবিরাম সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ১৫ দিনে (৯–২৩ ডিসেম্বর) এখানে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৬ জন ডায়রিয়া রোগী। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে ২৫৭ জন, প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১১ জন। এর মধ্যে শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু ৩ হাজার ৩৭০ জন, যা মোট রোগীর প্রায় ৮৭ শতাংশ। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোগীর সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি হলেও এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর নেই।
ডায়রিয়ার এই চাপ শুধু মতলব বা চাঁদপুরে সীমাবদ্ধ নয়। কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জসহ আশপাশের জেলার রোগীরাও ভিড় করছে এই হাসপাতালে। এমনকি মুরাদনগর, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি ও লাকসামের মতো দূরের এলাকা থেকেও শিশুরা চিকিৎসা নিতে আসছে।
চিকিৎসকদের মতে, শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় ভাইরাস দ্রুত ছড়ায়। এর সঙ্গে দূষিত পানি ও খাবার গ্রহণ করায় শিশুদের মধ্যে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া মারাত্মক রূপ নিচ্ছে।
মতলব উত্তরের এক অভিভাবক রাবেয়া বেগম বলেন, “সকাল থেকে বাচ্চার বমি আর পায়খানা বন্ধ হচ্ছিল না। এখানে এনে স্যালাইন দেওয়ার পর একটু ভালো হয়েছে। শীত পড়তেই গ্রামের অনেক বাচ্চা অসুস্থ হচ্ছে—ভীষণ ভয় লাগছে।”
কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকে আসা মো. সালাউদ্দিন জানান, “রাতে হঠাৎ ছেলের অবস্থা খারাপ হয়। কাছের হাসপাতাল থেকে এখানে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত চিকিৎসা পেয়েছি বলে স্বস্তি পাচ্ছি।”
আইসিডিডিআরবি মতলব রিসার্চ সেন্টারের প্রধান ডা. মো. আল ফজল খান বলেন, “আমাদের পর্যাপ্ত ওরস্যালাইন ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে সামান্য অসাবধানতাও বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। পরিষ্কার পানি, নিরাপদ খাবার ও স্বাস্থ্যবিধি মানলেই ডায়রিয়া অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
শীত পুরোপুরি শুরুও হয়নি। অথচ হাসপাতালের বারান্দা জুড়ে শিশুর কান্না, মায়ের উৎকণ্ঠা আর চিকিৎসকদের ব্যস্ততা জানিয়ে দিচ্ছে—সতর্ক না হলে সামনে ডায়রিয়ার চাপ আরও বাড়তে পারে।
Sign in to your account