আজ সোমবার

২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৯ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি

এখন সময়:

সকাল ৮:৩৩

মতলবে আলু নিয়ে বিপাকে কৃষকেরা

249 Views

আলুর দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মতলব দক্ষিণ উপজেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। হিমাগারে মজুত করা আলু এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৬ থেকে ২০ টাকায়। অথচ গত বছর একই সময়ে দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মৌসুমের শেষ ভাগেও দাম না বাড়ায় আশাভঙ্গ হয়েছে চাষিদের। একই সঙ্গে হিমাগার মালিকরাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। কারণ অধিকাংশ কৃষক ও ব্যবসায়ী হিমাগার থেকে আলু নেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

কৃষকদের হিসাবে, মাঠে আলু উৎপাদন ও হিমাগারের নেওয়া পর্যন্ত কেজিপ্রতি খরচ পড়ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা। হিমাগারে রাখা, বস্তা, ভাড়া ও অন্যান্য খরচ যোগ করে এ খরচ দাঁড়াচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ টাকার বেশি। আর বর্তমানে হিমাগারেই কেজি প্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে আট টাকা থেকে সাড়ে ৮ টাকা।

উপজেলার বাড়ৈগাঁও গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, তিনি ২ হাজার ৫০০ বস্তা আলু হিমাগারে রাখেন। আলু তুলে বিক্রি করলে যে টাকা গাবেন, তাতে তাঁর ২৯ লাখ টাকার বেশি লোকসান হবে। লোকসান এড়াতে আলু তুলবেনই না ভাবছেন। আগামী নভেম্বরে উত্তরবঙ্গ থেকে বাজারে নতুন আলু আসবে। এ জন্য দাম বাড়ারও সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এবার হিমাগারে আলু রেখে মহাবিপাকে পড়েছি। আম ও ছালা সবই গেছে এবার। লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদনের খরচও পাচ্ছি না।’

হিমাগারে আলু রেখে মহাবিপাকে পড়েছি। আম ও ছালা সবই গেছে। লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদনের খরচও পাচ্ছি না। হিমাগারের শেডে পড়ে আছে অবিক্রীত আলুভর্তি মার্শাল ও মমতা হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, বস্তা। আলু তোলার জন্য দু-একজন কৃষক সেখানে আনাগোনা করলেও আলু না তুলেই ফিরে যান। পচন এড়াতে শেডে শুকানো হচ্ছে অনেক আলু। ক্রেতা না থাকায় এসব আলু পড়ে আছে।

উপজেলার মার্শাল অ্যান্ড মমতা কোল্ড স্টোরেজ এবং মার্চেন্ডাইজ কোল্ড স্টোরেজ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে খুব একটা কর্মব্যস্ততা নেই। শেডগুলো ফাঁকা, আর টুকটাক কেনাবেচা হলেও বাজারে আলুর চাহিদা নেই বললেই চলে। উভয় কোল্ড স্টোরেজের প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা দুই লক্ষ বস্তা। কিন্তু বর্তমানে মার্শাল অ্যান্ড মমতা কোল্ড স্টোরেজে এক লক্ষ ৭৪ হাজার এবং মার্চেন্ডাইজ কোল স্টোরে এক লক্ষ ৭৩ হাজার বস্তা মজুদ রয়েছে।

এ বিষয়ে মার্শাল এন্ড মমতা কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, গত বছর আলুর দাম ভালো হওয়ায় এবার অনেকেই আলু চাষ করেছেন। কিন্তু বর্তমানে আলুর দাম পড়ে যাওয়ার কারণে কৃষকরা হিমাগার থেকে আলু নিচ্ছেন না। আলু না নেওয়ার কারণে আমরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। শেষ পর্যন্ত হিমাগার খালি করতে আলুগুলো ফেলে দিতে হবে। এতেও শ্রমিকের খরচ যুক্ত হবে।

হিমাগার থেকে আলু নেওয়ার জন্য আসা কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৫০ কেজির আলুর বস্তা হিমাগার থেকে বের করে শেডে রেখে বাছাই করলে পাঁচ থেকে দশ কেজি নষ্ট হয়। সেই হিসেবে ৫০ কেজির আলুর বস্তা হয়ে যায় ৪০ কেজি। এতে হিমাগারের ভাড়া ও মাঠ থেকে হিমাগার পর্যন্ত আলু স্টোরেজ করা পর্যন্ত কেজি প্রতি খরচ ৩০ টাকা হলেও এখন দাম ৮ টাকা। হিমাগার থেকে আলু বের করতে হলে যে দামে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে সেটাই চলে যাবে হিমাগার ভাড়ায়। কৃষকরা জানান তারা এসেছেন বাড়িতে খাওয়ার জন্য আলু নিতে।

মতলব পৌর এলাকার উত্তর উদ্দমদী গ্রামের কৃষক শরীফ বলেন, ‘এক কেজি আলু তুলতে আমার খরচ হচ্ছে ২০ টাকা। বস্তা, গাড়ি ভাড়া মিলিয়ে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৩০ টাকা। অথচ বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা।’

মতলব বাজারের আলু ব্যবসায়ী আলা উদ্দিন খান জানান, বাজারে আলুর ক্রেতা নেই। দামও মিলছে না। তিনি বলেন, ‘মৌসুমের শেষ ভাগে আলু বিক্রি হবে ভেবেছিলাম, কিন্তু এখন হিমাগারে ২০ হাজার বস্তা আলু আটকে আছে। দাম না থাকায় বিক্রি করতে পারছি না।’
হিমাগার মালিকরা আশঙ্কা করছেন, আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নতুন আলুর চাষ শুরু হলে ৬০ দিনের মধ্যে তা বাজারে উঠবে। তখন পুরোনো আলু বিক্রি হওয়াই কঠিন হয়ে পড়বে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর শেষে ৫০ থেকে ৬৫ শতাংশ আলু হিমাগারেই পড়ে থাকবে। বারবার তাগাদা দিলেও কৃষক-ব্যবসায়ীরা লোকসানের ভয়ে আলু তুলতে আসছেন না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চৈতন্য পাল বলেন, গতবছর উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩২৫ সেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ২৪৫০ সেক্টর জমিতে। বর্তমানে আলুর দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছে। তাই আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদের পরামর্শ দিচ্ছি.

Share This Article
Leave a Comment

শেয়ার করুন:

শীর্ষ সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ