আজ বৃহস্পতিবার

২৬শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১২ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১লা মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

এখন সময়:

রাত ৮:৪০

অন্ধকার ইতিহাসের সাক্ষী ‘লুধুয়া জমিদার বাড়ি’

9 Views

ঘুটঘুটে অন্ধকার আর এই ভুতুরে পরিবেশ জানান দিচ্ছে অভিশপ্ত অত্যাচারী এক জমিদার বাড়ির ইতিকথার। দেয়ালে কান পাতলে মনে হয় এখনো শোনা যাচ্ছে, অসহায় প্রজাদের কান্না আর হাহাকারের শব্দ।

স্থানীয়দের মুখে এখনো প্রচলন রয়েছে এই বাড়ির সামনে থেকে জুতো পায়ে হেঁটে যেতে পারতেন না কোন প্রজা। সামান্য কোন অপরাধ করলেও দেয়া হতো কঠোর শাস্তি। অত্যাচার আর শোষণই ছিল এই জমিদারের মূলনীতি। কখনোই প্রজাদের নিয়ে ভাবতেন না এ জমিদার। মতলবের ইতিহাস ঐতিহ্য ও দর্শনীয় স্থান নিয়ে মতলব টুডেdর ধারাবাহিক প্রামাণ্য চিত্রে আজকের পর্বে আমরা আপনাদের জানাবো মতলব উত্তর উপজেলার লুধুয়া জমিদার বাড়ি সম্পর্কে।

মতলব উত্তরে প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পূর্বের ঐতিহ্যবাহী এই জমিদার বাড়িটি উপজেলার পূর্ব ফতেহপুর ইউনিয়নের লুধুয়া হাইস্কুলের পার্শ্ববর্তী মিয়াজি বাড়িতে অযত্ন অবহেলায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনও দাড়িয়ে আছে।

প্রায় ১৭০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জমিদার ছিরাপদি মিয়াজি এখানে তার জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন খুবই অত্যাচারী জমিদার। তারা মোট তিন ভাই ছিলেন। পূর্বে এই জমিদার বাড়িতে অনেক স্থাপনা থাকলেও বর্তমানে ৩টি স্থাপনা অবশিষ্ট রয়েছে। ভবনের ভেতর মাটির নিচে এখানে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে চাপা পড়ে আছে নির্মম হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ এক অন্ধরমহল। রয়েছে ঘোড়াশালা, দিঘী, খাসকামরা। এছাড়াও জমিদারের ঘোড়ার পানি খাওয়ার বড় ডালাসহ দিনিদিন ক্ষয়ে যাচ্ছে বহু নিদর্শন।

জনশ্রুতি আছে, প্রজাদের সুখ-দুঃখ দেখায় সময়ই ছিলনা জমিদার ছিরাপদী মিয়াজীর কাছে। জমির খাজনা দিতে কারও দেরি হলে প্রাসাদের অন্ধরমহলে চলত অবর্ণনীয় নির্মম নির্যাতন। আবার কখনো কখনো এই অন্ধরমহলে ভয়ঙ্কর মৃত্যুও হত অসহায় প্রজাদের শেষ পরিনতি।

নির্মম অত্যাচারের বেশ কিছু ঘটনার মধ্যে, সর্বালোচিত অপরুপা নারী পাশা খুন এবং তার অভিশাপের ঘটনাও প্রবীণ কয়েকজনের মুখে মুখে।

এছাড়াও কথিত আছে, জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া গর্ভবতী এক নারীর পেটের সন্তান ছেলে না মেয়ে, এই তর্কে প্রাসাদে এনে দুই ভাইয়ের পেট কেটে দেখার মতো গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনাও।

বর্তমানে জমিদার বাড়িতে যারা আছেন তারা ৩টি পরিবারে বিভক্ত। জমিদার বাড়ির ৩টি স্থাপনা এবং পুকুর তারা তিন পরিবার ভাগ করে নিয়েছে। তিন পরিবারই তাদের ভাগের স্থাপনা গুলো পরিচর্যা এবং সংরক্ষন করে আসছে। বর্তমানে এখানে রয়েছে নানা জাতের মুরগীর খামার, মাছ চাষ করা হয় পুকুর গুলোতে, তৈরি করা হয়েছে নতুন মসজিদও।

সর্বশেষ আইয়ুব খানের আমলে অপরুপা পাশার অভিশাপের কলংক নিয়ে এই বাড়ির জমিদারি রাজত্ব-ঐশ্বর্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

Share This Article
Leave a Comment

শেয়ার করুন:

শীর্ষ সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

error: Content is protected !!